ইচ্ছের শেষ প্রহরে লাশ (নষ্ট ক্যাঁপাচিটার)
লিখেছেন লিখেছেন shaidur rahman siddik ২৪ জানুয়ারি, ২০১৫, ১১:৫৮:৫৪ রাত
সন্ধায় ঘুম থেকে উঠে রহিম মনটা খারাপ করেই বললো....
রানুর মা...ঘরে খাবার কি আছে লো? আইজ একটু তারাতারি খাবার দে... কয়দিন ধরে কাম কাজ করি না রুজি রোজগাও নাই, পকেডে একটা টাহাও নাই
আজ মহাজন গাড়ী লাগাতে বলেছে ..বড় খ্যেপ আছে আজ। হরতালের কারনে টেকাটাও বেশি পামু....
রানুর মা বললঃ ঘরে তো কিচ্ছু খাবার নাই, সব শ্যেষ হয়া গেছে, আইজ গাড়ীতে গেলেই কাল থেকে খাবারের অভাব হবেনানে।
..আইচ্ছা যা আছে দে --তারাতারি যাইতে হইবো, কিন্তুু রানু কই..?? পোলাডারে আজ দেখতে পাচ্ছি না, যাবার সময় হয়েছে...একটু ডেকে আনতো, দেহেই যাই।
ততোক্ষনে রানু নাচতে নাচতে এসে বাবার কোলে এসে বসেছে..আর বলতেছে... বাজান আইজ কই যাইচ্ছেইন..??
..বাপরে কামে যাচ্ছি. .. তুই সুন্দর করে ঘুমিয়ে পড়িস.. কাইল সকালে তোর জন্য ম্যালা খাবার আনমু।
রানুঃ আইচ্ছা বাজান, আইনেন। আর মার জন্য একখান সুন্দর কাপড় আইনেন, মার অনেকদিন ধইরা কোনো ভালা কাপড় নাই।
..হাহাহা.. আচ্ছা আমার বাবা, তোর মার জন্যও আনমু তোর জন্যও আনমু.., এখন শুয়ে পড় আমার যাবার সময় হইছে...
রানুঃ হুম আইচ্ছা বাজান, সাবধানে যাইয়েন।
...কৈ লো কৈ গেলি..?? গামছাখানা দে.., যাওয়ার সময় হয়েছেতো।
--আইতাছি..
...আহো জলদি, যাওয়ার সময় সোনা মুখখানা দেইখাই যাই...
--তোমার ঢং এ আর বাচি না :-/
..ওলে আমার দুষ্টু সোনারে...তোর জন্য কাইল এক্খান নয়া শাড়ী আনমু...কাইল পরবি, আর আমি ব্যেকদিন তোরে চাইয়া চাইয়া দেহুম..
--ওহো, দরদ দেখাতে হবনানে, সাবধানে যাইয়েন কিন্তুু..
..আইচ্ছা গো! আইচ্ছা..
বউয়ের সাথে সংসারের আলাপ আলোচনা করে ঘর থেকে বাহির হলেন রহিম, মহাজনের কাছ থেকে গাড়ীর চাবি নিয়ে গাড়ী স্ট্রাড করে যেতে লাগলেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে...
রাত গভীর হতে লাগলো.. চোখে ঘুম ঘুম ভাব রহিমের, কিন্তুু তার কালকের স্বপ্নের সৃতি স্বরন করে গাড়ীর হুইল ঘুড়িয়ে ঘুড়িয় মনটা ফুরফুরে করে বেশ আনন্দের সাথেই চলতে লাগলো।
রাস্তার মাঝে একটা বিরতি দিয়ে এক কাপ চা আর একটা সিগারেট ধরিয়ে আবার চলতে লাগলো,, এক সময় পৌছে গাড়ী আনলোড করে বেশ মজা করেই আসতেছিল রহিম...
সন্ধার চিত্রগুলি ভেসে আসতে লাগলো..আর একটু পরেই পরিবারের সব ওয়াদা পালন করতে পারবে বলে।
ভোর হওয়া হওয়া ভাব ... চারিদিকে নিস্তবদ্দতায় সবকিছুই, শুধু মাত্র ফজরের দেওয়ার জন্য রাস্তায় মোয়াজিন্নের চলাচলের আনাগোনা।
হঠাৎ করেই জানালা দিয়ে গাড়ীর ভিতরে চলে আসলো ছোট্ট একটি আগুনের ফুলকি......
রহিম এবার থমকে গেল--হায় আল্লাহ তুমি আমাকে রক্ষা করো...বলতে লাগলো আর গাড়ীর দরজা খুলতে লাগলো।
কিন্তুু রহিম আর পারলো না...
দরজা দিয়ে রহিম ঠিকই রাহির হলো..কিন্তুু রহিমের সর্বাঙ্গ প্রজ্জলিত অগ্নিদাহ অবস্হায়।
রহিম দু হাত দিয়ে সারা শরীরের আগুন নেভাতে লাগলো..কিন্তুু পাড়লো না।
. .. অবশেষে একটু আগের রক্তে মাংসে ভরা শরীরটুকু অগ্নিদগ্ধ হয়ে পোড়া আঙড়ার রুপ ধারন করে নুলে পড়লো মাঠিতে...
.. সকালে খবর পেয়ে রহিমের লাশটা বাড়ীতে নিয়ে আসা হলো..
চারদিকটা নিস্তব্দতায় কাতরাচ্ছে...
রানুর চোখ দিয়ে শুধু পানি ঝড়ছে আর বলতেছে.... বাপজান..ও বাপজান তুমি না মার জন্য নয়া কাপড় আনতে চাইছিলা,,?? আনলানা কেন বাপজান..??
মার নয়া কাপর খানা এনে দিয়েই তুই যাইতি বাপজান.....মার কান্না দেখে আমি আর সহ্য করতে পারছি না বাপজান.....
এদিকে রানুর বার বার বেহুশ হচ্ছে আবার হুশ ফিরেই রহিমের চেহারা দেখে....
আল্লারে...আমি কি করবো এখন..?? তুমিই তো আমাদের সম্বল ছিলে...আইজ থ্যাইকা আমি কি করমু.., আমার জীবনে এমন হবে তা ভাবতেই পাই নাই...কেন যে তোমাকে কাইল যাইতে দিছিলাম.....
আল্লারে...রানুর কি হইবো...??? না আমি বিশ্বাস করি না, তুমি মরো নাই..আল্লারে...ও আল্লাহ্ কি দেখাইতেছো আমাকে....
...পাড়াপড়শি সবাই থমকে আছে, কেউ বা রহিমের আগের সৃতিচারণ গুলি স্বরন করে চোখ দিয়ে পানি ঝড়াচ্ছে... কেউ বা কান্নার পাশাপাশি রহিমের দাফনের কাজ সমপন্ন করার জন্য ব্যস্ত...
সবাই কাঁন্না করছে আর বলছে........
আমরা আর এমন দেখতে চাই না, আমরা এসবের জন্য রাজনীতির ছোয়াও যাই না, বন্ধ করুন মরন নেশার রাজনীতির খেলা।
....তাদের, তাহাদের আজ কিছুই হচ্ছে না, জ্বলছি আমরা,পুড়ছি আমরা, মরি আমরা, মারিও আমরা....
আমরা শান্তি চাই....আমরা শান্তি চাই...
বিষয়: রাজনীতি
৯৮৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন